নগরকান্দায় ইউপি সদস্যের আত্মহত্যার জেরে প্রতিপক্ষের বাড়ী ভাংচুর, লুটপাট, সাংবাদিকের উপর হামলা

নগরকান্দা (ফরিদপুর) প্রতিনিধি
ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলার কাইচাইল ইউনিয়নের উত্তরকান্দী গ্রামে জাহাঙ্গীর হোসেন মাতুব্বর (৫০) নামে এক ওয়ার্ড সদস্যের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। শনিবার সকাল সাড়ে ৫টার দিকে একটি আম গাছে ঝুলন্ত অবস্থায় তার লাশ উদ্ধার করে থানা পুলিশ।
জাহাঙ্গীর হোসেন কাইচাইল ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য। তিনি বিবাহিত এবং স্ত্রী ও দুই ছেলে রয়েছে। এ ঘটনায় তার ভাই লাবলু মাতুব্বর বাদি হয়ে নগরকান্দা থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের করেছেন। এদিকে এই আত্মহত্যার ঘটনাকে কেন্দ্র করে জাহাঙ্গীরের সমর্থকেরা প্রতিপক্ষের আটটি বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাংচুর ও লুটপাট করে। এ সময় ভাংচুর ও লুটপাটের ছবি তুলতে গেলে সংবাদকর্মীর উপরও হামলা চালায় এবং ক্যামেরা ও মোবাইল ছিনিয়ে নেয়।
জাহাঙ্গীর মাতুব্বরের বড় ছেলে সাব্বির মাতুব্বর বলেন, রাত সাড়ে ১০টার দিকে তারা ঘড়িতে অ্যালার্ম দিয়ে ঘুমাতে যান। এরপর তিনটার দিকে সেহরী খাওয়ার জন্য উঠে দেখেন তার মা ঘরে শোয়া কিন্তু বাবা নেই। এরপর প্রথমে ঘরের বাথরুমে তালাশ করে না পেয়ে বাইরের বাথরুমে খুঁজতে যেয়ে দেখেন পাশের আমগাছে তার বাবার লাশ ঝুলছে।
প্রতিবেশীরা জানান সম্প্রতি করোনা ভাইরাসের কারণে সরকারের দেয়া খাদ্যবান্ধব কর্মসূচীর চাহিদাপত্রে জাহাঙ্গীর হোসেন নিজের দুই ভাই, ভাইয়ের স্ত্রী ও ছেলের নাম সুবিধা ভোগীদের তালিকায় অন্তভুর্ক্ত করেন এ নিয়ে এলাকায় একটি গ্রুপ জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে মানববন্ধন করে এবং কিছু সাংবাদিকদের দিয়ে সংবাদ প্রকাশ করে। মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ছিলেন জাহাঙ্গীর মাতুব্বর।
কাইচাইল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কবির হোসেন ঠান্ডু বলেন, ত্রানের চাহিদাপত্রে জাহাঙ্গীর হোসেন নিজের দুই ভাই, ভাইয়ের স্ত্রী ও ছেলের নাম সুবিধা ভোগীদের তালিকায় অন্তভুর্ক্ত করেন। অবশ্য তিনি কোন চাল উত্তোলন করেননি। এ বিষয়ে ব্যাপক আলোচনায় আসায় মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ছিলেন জাহাঙ্গীর মাতুব্বর। সম্প্রতি তিনি দক্ষিণকান্দী গ্রামের বাড়ি ছেড়ে উত্তরকান্দীতে নতুন বাড়ি করেছেন। ওই বাড়িরই একটি আম গাছে ঝুলে গভীর রাতে আত্মহত্যা করেন তিনি।
এদিকে জাহাঙ্গীর হোসেনের আত্মহত্যার খবর জানাজানি হলে তার সমর্থকেরা রাতেই তার প্রতিপক্ষ নাসিম মাহমুদ সাবুল, তারা মিয়া, সুরুজ মিয়া, বালা মাতুব্বর, ফারুক মাতুব্বর, জয়গুন বেগম, রেজাউল মাতুব্বর ও মহি মিয়ার বাড়িতে হামলা চালায়। এসময় তারা ভাংচুর ও লুটপাট করে বলে অভিযোগ করা হয়। সকালে ঢাল, সড়কি, রামদাসহ দেশীয় অস্ত্র নিয়ে আরেক দফা হামলা করা হয়।
নাসিম মাহমুদ সাবুল বলেন, হামলাকারীরা তার প্রায় ১০ লাখ টাকার মালামাল ক্ষয়ক্ষতি ও লুটপাট করেছে। এছাড়া বর্তমান কথা পত্রিকার নগরকান্দা উপজেলা প্রতিনিধি শরিফুল ইসলাম মন্টু সকালে এ ঘটনার তথ্য সংগ্রহ করতে সরেজমিনে গেলে তার উপর হামলা চালায় জাহাঙ্গীর হোসেনের লোকেরা।
সাংবাদিকদের উপর হামলা ঘটনায় সাংবাদিক শফিকুল ইসলাম মন্টু বাদি হয়ে নগরকান্দা থানায় অভিযোগ দায়ের করেছে।
সংবাদ সংগ্রহ করতে যাওয়া সাংবাদিকের উপর হামলায়
নগরকান্দা প্রেসক্লাবের সভাপতি বোরহান আনিস এর তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। হামলাকারীদের দৃস্টান্ত মুলক শাস্তি দাবী করেন তিনি।
নগরকান্দা থানার ওসি সোহেল রানা বলেন, প্রাথমিক তদন্তে এটি আত্মহত্যা বলে জানতে পেরেছি। লাশ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় নিহতের ভাই লাবলু মাতুব্বর বাদি হয়ে একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের করেছেন। প্রতিপক্ষদের বাড়িঘরে হামলা ও ভাংচুরের ব্যাপারে তিনি বলেন, এ ঘটনার পর সেখানে কিছু উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। বর্তমানে এসআই কালামের নেতৃত্বে সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়ন করা হয়েছে।
সাংবাদিকের উপর হামলার বিষয়ে তিনি বলেন, অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
২৫ এপ্রিল ২০২০